শাহেদুল ইসলাম মনির, কুতুবদিয়া:
পর্যটকের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের মূল-ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুতুবদিয়া। নৌ এবং স্থল দুই পথে পাড়ি দিয়ে ভ্রমণ পিয়াসুরা আনন্দ উপভোগ করতে ছুটে আসছে এ দ্বীপে।
এ দ্বীপের পশ্চিম উপকুল ঘেষে প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ বালিয়াড়ির সমুদ্রসৈকতে ছবিতোলা, হৈ-হুল্লোড়, আড্ডা, ফুটবল খেলা যেন আনন্দের কোন কমতি নেই।
এ জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সাগর ঘেরা এ দ্বীপে বিচরণ করলে দেখা মিলে নানা প্রজাতির পাখি, মাছ,লাল কাকড়া ,শামুক,ঝিনুক, মাছ ধরার নৌকার সারি। আর ঐতিহাসিক বিখ্যাত বাতিঘর, প্রাচীন স্থাপত্য কালারমার মসজিদ, ফকিরা মসজিদ, লবণ শিল্প, মৎস্য ভান্ডার, সম্ভাবনাময়ী সর্ব বৃহৎ ভুগর্বস্থ গ্যাস ক্ষেত্র।বাংলাদেশের সর্ব প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প ও দৃষ্টিনন্দন সারি সারি সবুজ ঝাউবীথি। আরও রয়েছে হযরত শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবী (রাঃ) এর মাজার শরীফ।
পূর্বে এখানে পর্যটকের যাতায়াত কম হলেও বর্তমানে দ্বীপের পর্যটন স্পটগুলো আগত পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে । ফলে, প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক দূর দূরান্ত থেকে
এ দ্বীপে আসছেন। পর্যটকদের আগমনে দ্বীপের পর্যটন স্পষ্টগুলো তাদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীদের দাবি
সরকারী এবং বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিলেই হতে পারে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র এ দ্বীপটি।
কক্সবাজার খুরুশকুল রোগী কল্যাণ গ্রুপের বার্ষিক বনভোজনে দ্বীপে ঘুরতে আসা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের কিউরেটর, ডা. মোঃ শাহীন আবদুর রহমান চোধুরী বলেন,কুতুবদিয়া হচ্ছে কক্সবাজারের একমাত্র দ্বীপ উপজেলা যেটি মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ভৌগলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর বিভিন্ন স্থাপনার গুরুত্বের বিচারে কুতুবদিয়া নিঃসন্দেহে নারিকেল জিঞ্জিরা খ্যাত সেন্টমার্টিন এর চেয়েও অনেক এগিয়ে এবং পর্যটনের জন্যে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি স্থান। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এটা লাইমলাইটে আসেনি। সম্প্রতি আমি কুতুবদিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি। তাই আমার মনে হয়েছে এর ব্যাপক প্রচারণা ও ব্রান্ডিং প্রয়োজন। তারই একটা প্রারম্ভিক অংশ হিসেবে আমি আমার একটা সেবামূলক সংগঠন “খুরুশকুল রোগী কল্যাণ গ্রুপ” এর এবারের বার্ষিক বনভোজন এর ভেন্যু নির্ধারণ করেছি কুতুবদিয়া। এখানে পর্যটন গড়ে ওঠলে একদিকে যেমন কক্সবাজারে বেড়াতে আসা ভ্রমণ পিপাসুরা বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন অন্যদিকে পর্যটনকে ঘিরে কুতুবদিয়ার জীবন জীবিকা, অবকাঠামোগত ও বহুমাত্রিক উন্নয়ন সাধিত হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি এম,শহীদুল ইসলাম বলেন,সাগরবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া পর্যটকের জন্য চমৎকার একটি পর্যটন স্পট। দ্বীপে আগত পর্যটকগণ এক সাথে সাগর ভ্রমণ, সীবিচ এবং বিশাল বালিয়াডি উপভোগ করতে পারে। তবে দ্বীপে পর্যটকের জন্য সরকারী বেসরকারীভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নিলে পর্যটকগণের আনন্দ ভ্রমন আরো বেশী উপভোগ্য হবে বলে মনে করেন তিনি।
তন্মধ্যে সীবিচে ছাতা সম্বলিত চেয়ার স্থাপন, সৈকতের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা, পর্যটকদের ঘাট পরাপারে হয়রানী বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। আগত পর্যটকদের রাত্রীযাপনের জন্য বিগত কয়েক বছর পূর্বে থেকে পর্যটন কর্পোরেশনের অর্থায়নে একটি পর্যটন মোটেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেও অদ্যবধি বাস্তবায়নের কোন প্রকল্প দৃশ্যমান হয় নাই তাই দ্রুত সরকারিভাবে একটি পর্যটন স্থাপনের দাবি জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ইউএনও দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন,
পর্যটন ক্ষেত্রে এ দ্বীপকে কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায় এবং পর্যটকরা যাতে দ্বীপের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্পটে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারে সে বিষয়ে সবার মতামত ও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এটা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।